ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ সরকারী নীতিমালাকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে ফরিদপুর সদরের শিল্পনগরী ঐতিহ্যবাহী কানাইপুর বাজার পরিচালনা কমিটির জন্য অনুমোদন ব্যতীত মনগড়া ভিত্তিহীন সমিতি গঠন করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। পরিচালনা কমিটির জন্য সমিতির নাম দেয়া হয়েছে “কানাইপুর বাজার বণিক সমিতি”, যার কোনো রেজিস্ট্রেশন নাম্বারও নেই।
বাজার পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বিধিভঙ্গ করে এই নির্বাচন কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কয়েকজনের সম্বনয়ে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী মোল্লা (মিনু) রয়েছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে।
তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোটার তালিকায় এবং মনোনয়ন ফরমে তার নাম থাকলেও নেই কোনো স্বাক্ষর। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারের ব্যবসায়ী ও নমিনেশন ক্রয়কৃত প্রার্থীরা। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় বড় ধরণের সংঘর্ষও ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারী উক্ত সমিতির নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা কার্যক্রমও শেষ হয়েছে।
এ নির্বাচনে একজন সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, একজন সভাপতি সহ ১৭টি পদে প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন। কিন্তু কোনো রেজিস্ট্রেশনকৃত সমিতি না থাকায় বিগত দিনে সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী হাট-বাজার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। হঠাৎ বিগত কমিটিকে না জানিয়েই বনিক সমিতির নাম দিয়ে নির্বাচন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী থাকা কমিটির সদস্যরা।
হাট-বাজার পরিচালনার জন্য সরকারী পরিপত্র (গেজেট) থেকে জানা যায়, হাটবাজারের দৈনন্দিন পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নসহ সকল কার্যাবলী পর্যালোচনার জন্য প্রতিটি হাটবাজারের ব্যবস্থাপণা কমিটিতে পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সভাপতি, সদস্য সচিবসহ ১০ সদস্যের কমিটি থাকবে।
রবিবার (১৬ জানুয়ারী, ২০২২ইং) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কানাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মোল্লা মিনুর ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে নির্বাচনী অফিস। সেখানে বসেই চলছে সকল কার্যক্রম। এ সময় উক্ত সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার আলী মোল্লা মিনুকে পাওয়া যায়নি। অথচ তফসীল ঘোষণা অনুযায়ী চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। কোনো কাগজপত্রে নেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর।
এ সময় সদস্য সচিব লক্ষণ চক্রবর্তী জানান, তিনি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে রয়েছেন। তিনি ফোন করে জানিয়েছেন আমাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। পাশে থাকা খোকন মোল্যা নামে একজন জানান, তাকে ফোন করে জানানো হয়েছে যে সে এই আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য। এছাড়া কানাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রতন সিকদার নিতাই অভিযোগ করেন আমাকে না জানিয়ে এই কমিটির সদস্য বানিয়েছে।
এ সময় কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হচ্ছে এবং সমিতির রেজিস্ট্রেশন আছে কি-না জানতে চাইলে তারা বলেন, এ সমিতির কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। আমরা ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসির সাথে আলোচনা করে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এ বিষয়ে কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা যে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেটা এখনও আমাকে জানায়নি। একটি স্বার্থান্বেষী মহল সরকারি পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা এই বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এটা হবে একটি প্রহসনের নির্বাচন। এই আহ্বায়ক কমিটি কাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে, এর কোনো রেজিস্ট্রেশন ও আইনগত বৈধতা নেই।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুদুল আলম বলেন, আমি বিভিন্ন লোক মাধ্যমে জানতে পেরেছি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখতে পয়েছি তারা বাজারে একটি বণিক সমিতির নামে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নির্বাচন করতে হলে সে সংগঠনের একটি অনুমোদন লাগে, রেজিস্ট্রেশন থাকা লাগবে এবং বনিক সমিতির নামে করলে আমাদের যে শাখা আছে এখান থেকে অনুমতি নিতে হবে।
তিনি আরো জানান, সরকারী অনুমোদিত হাটবাজারগুলো স্থানীয় সরকারের একটি নীতিমালা আছে, সে অনুযায়ী বাজার কমিটি থাকবে। এছাড়া আমি, লিখিত সরাসরি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এটা কারা করছে, কারা পরিচালনা করছে, কারাইবা আয়োজন করছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।